সদ্য পাসকরা মি. হাবীব বাবার গড়া নতুন শিল্প ইউনিটের দায়িত্ব নিয়েছেন । বাবাকে রাতদিন ব্যবসায় নিয়ে যেভাবে ভাবতে দেখেছেন তা তার নিকট পছন্দের মনে হয়নি । তার ভাবনা, এত সিরিয়াস হওয়ার কী আছে । নতুন জনশক্তি নিয়োগ করতে হবে । বাবাকে বললেন, কী কী পদে লোক নিয়োগ দিতে হবে- এটা ঠিক করে দাও । এরপর আমি আমার পছন্দমতো লোক নিয়ে নেবো । বাবা বললেন, আগে ভাবো কী মানের, কোন ধরনের লোক, কোত্থেকে, কিভাবে সংগ্রহ করতে হবে । পরিকল্পনা নিয়ে কাজ না করলে সমস্যায় পড়বে । মি. হাবীবের ভাবনা, মানুষ তো সব শিখে আসে না । করতে করতে শিখবে । তিনি অভিজ্ঞ লোক নিয়োগের বিষয়টি মাথায় না নিয়ে সদ্য পাস করা ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন । নিয়োগ দিতে যেয়ে প্রতিষ্ঠানের যে সু-নির্দিষ্ট নিয়ম-পদ্ধতি ছিল তা না মেনে বন্ধু-বান্ধবদের সুপারিশ আমলে নিয়েছেন । প্রতিষ্ঠান চালাতে যেয়ে এখন তিনি হাড়ে হাড়ে সমস্যা অনুভব করছেন। না নিজে তেমন কিছু বুঝছেন না কারও সহযোগিতা পাচ্ছেন । তাই প্রতিষ্ঠান আর ঠিকমতো চলছে না । তিনি বুঝতে পারছেন আবেগ দিয়ে ব্যবসায় চলে না । ভেবে-চিন্তে পরিকল্পনা মাফিক ব্যবসায় চালাতে না পারলে বিপদে পড়তেই হয় । পরিকল্পনার গুরুত্ব এখন তার নজরে এসেছে ।
উপরের উদ্দীপক বিবেচনায় নিলে এটা স্পষ্ট যে, পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয় । যা প্রতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনকে ব্যাহত করে । বিভিন্ন দিক থেকে পরিকল্পনার গুরুত্ব নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জন (Accomplishment of organisational objectives) : পরিকল্পনার প্রধান কাজ হলো কার্যক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দূর এবং ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা হ্রাসপূর্বক সহজতম পন্থায় ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করা । পূর্ব পরিকল্পনা থাকায় নির্বাহী ও তত্ত্বাবধায়কগণ এর আলোকে সহজেই করণীয় নির্ধারণ ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে । তাই কার্যকর পরিকল্পনা উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে একটি প্রথম ও প্রধান কার্য ব্যবস্থা ।
২. ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ (Development and expansion of business) : পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের ও বাইরের যে সকল সমস্যা ভবিষ্যতে মোকাবিলা করতে হতে পারে তা সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে তদনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় । যা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায়ের ঝুঁকি হ্রাস ও অনিশ্চয়তা দূর করে এর কার্যকলাপ সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সহজতর করে ।
৩. ব্যয় ও অপচয় হ্রাস (Minimization of cost and wastage) : আগে থেকে চিন্তা-ভাবনা করে কাজ শুরু করা হলে সেক্ষেত্রে বাহুল্য ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পায় । এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ে যদি বাজেট থাকে এবং বাজেটের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালিত হয় তবে মিতব্যয়িতা অর্জন সহজ হয় । এ ছাড়া জনশক্তি ও অন্যান্য উপকরণের অপচয় হ্রাস করতেও পরিকল্পনা সাহায্য করে ।
৪. উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার (Effective utilization of resources) : যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনে এতে নিয়োজিত মানবীয় ও বস্তুগত উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে কাজ করা হলে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রত্যেকটি উপায়-উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় । এর ফলশ্রুতিতে প্রত্যেকটি উপায়-উপকরণের কার্যদক্ষতা বাড়ে । আর দক্ষতার উন্নয়ন প্রাতিষ্ঠানিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও লক্ষ্যার্জন নিশ্চিত করতে পারে ।
৫. সঠিক কার্যধারা অনুসরণ (Following proper course of action) : পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করে । প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি, বিভাগ ও উপ- বিভাগ পরিকল্পনার অধীনে কাজ করায় প্রত্যেকে তাদের করণীয় সম্পর্কে আগাম জানতে পারে । এতে মানসিক প্রস্তুতি সহকারে কার্য সম্পাদন সম্ভব হয় ।
৬. ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজ বাস্তবায়ন (Implementation of other managerial functions) : পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার সমুদয় কাজের ভিত্তিস্বরূপ । পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজ; যেমন-সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কার্য সঠিকভাবে সম্পাদন করা যায় না । তাই পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজের সঠিক বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা প্রদান করে ।
আরও দেখুন...